ভিসা হারানোর ভয়ে নিয়োগকর্তাকে নিয়মিত অর্থ প্রদান করতো এক ভারতীয় বাবুর্চি

সাবেক নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় জয় লাভ করেছেন একজন অস্থায়ী ভিসাধারী কর্মী। এই পথ-প্রদর্শনকারী রায়ের ফলে অন্যান্য অভিবাসীরাও এখন মুক্তির পথ পেতে পারেন।

Temporary visa holder Ninumol Abraham.

Temporary visa holder Ninumol Abraham. Source: SBS News

ভিসা স্ট্যাটাসের ভয় দেখিয়ে অস্থায়ী ভিসাধারী এক ভারতীয় নারীর প্রতি তার নিয়োগকর্তা বৈষম্যমূলক আচরণ করতো। তিনি তার সাবেক নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় জয়ী হয়েছেন। এরপর তিনি অন্যান্য অসহায় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাদের প্রতি নিপীড়নের বিষয়ে মুখ খোলার জন্য।

নিজের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের জন্য বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে একসময়ে বুঝতে পারেন ভারতীয় রাধুনি (শেফ) নিনুমল আব্রাহাম। ক্যানবেরাতে একটি ভারতীয় রেস্টুরেন্ট, বিন্নিস ক্যাথিত্ত-তে কাজ করতেন তিনি।

এই রেস্টুরেন্টটির মালিক ছিল রোজ থমাস। তাকে সহায়তা করতো তার স্বামী বিন্নি বাবু।

এসিটি সিভিল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল জানতে পারে যে, মিজ আব্রাহামকে জোর-পূর্বক সাপ্তাহিক ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে এবং তার বেতন থেকে “ক্যাশ ব্যাক” স্কিমের মাধ্যমে আর্থিক অনিয়মও করা হয়েছে।
ট্রাইবুনালে বলা হয় যে, আবেদনকারী এই ভারতীয় নারী ভয় পাচ্ছিলেন যে, তিনি যদি তার নিয়োগকর্তার দাবির সঙ্গে একমত না হন, তাহলে তাকে কর্মচ্যুত করা হবে কিংবা তার ভিসা বাতিল করা হতে পারে।

এসবিএস নিউজকে মিজ আব্রাহাম বলেন,

“যারা (আমার মতো) এ রকম কষ্ট করছেন সে রকম লোকদেরকে আমি বলতে চাই, (আপনারা) সামনে আসুন। কোনো ব্যক্তিরই এ রকমভাবে কষ্ট করার দরকার নেই। এটি আধুনিক দাসত্বের মতোই। তাই, দয়া করে জনগণকে আপনার ঘটনা জানান।”

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ক্যানবেরার এই রেস্টুরেন্টটিতে কাজ শুরু করেন মিজ আব্রাহাম। ট্রাইবুনালে তিনি বলেন, যে দিনগুলোতে তিনি ছুটি নিবেন সে দিনগুলোতে দিন প্রতি তাকে ১০০ ডলার করে মিস্টার বাবুকে প্রদান করতে বলা হয়েছিল।

দুই সন্তানের জননী এই নারী ট্রাইবুনালকে আরও বলেন, মিস্টার বাবুকে পাক্ষিক ৫১১.৪০ ডলার করে নগদ অর্থ প্রদান করতে তাকে বলা হয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন, এটা ট্যাক্সের শর্ত হিসেবে করা হচ্ছে।

মিজ আব্রাহাম বলেন,

“এটা খুবই মর্মান্তিক ছিল, আমি আমার বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে পারতাম না। (আমার কোনো) পারিবারিক জীবন ছিল না।”

“আমি আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যত এবং নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম।”
Ninumol Abraham says she's relieved her case has finally been resolved.
Ninumol Abraham says she's relieved her case has finally been resolved. Source: SBS News
মিজ থমাস এবং মিস্টার বাবু ট্রাইবুনালকে বলেন যে, মিজ আব্রাহাম একজন গরিব কর্মচারি ছিলেন এবং মিজ আব্রাহাম যে তার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, এ বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন।

মিজ থমাস ট্রাইবুনালকে বলেন,

“অধিকন্তু, আমাদের উদ্বেগ ছিল যে, তার ভিসা বাতিল করা হতে পারে যদি তার নিয়োগ বাতিল হয়ে যায় এবং আমাদের সিদ্ধান্তের ফলে তার পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

ট্রাইবুনাল জানতে পারে যে, মিজ আব্রাহামকে বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল মিস্টার বাবু।

ট্রাইবুনালের সদস্য ডমিনিক মুলিগান তার কারণগুলোর মধ্যে লিখেন,

“আমি সন্তুষ্ট যে, আবেদনকারীকে মিস্টার বাবু বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল যে, সে যদি তার দাবি না মেনে নেয়, তাহলে তাকে কর্মচ্যুত করা হবে এবং এর ফলে তার ৪৫৭ ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন,

“আমি মেনে নিয়েছি যে, আবেদনকারী ভীত ছিল যে, সে যদি এসব দাবি মেনে না নেয় তাহলে তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং বিবাদি কিংবা মিস্টার বাবু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যে, তার ৪৫৭ ভিসা যেন বাতিল করে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
ট্রাইবুনাল দেখতে পেয়েছে যে, মিজ আব্রাহামের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। তার চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে এবং সেজন্য তাকে কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় নি।

ট্রাইবুনাল আদেশ দিয়েছে যে, নিয়োগদাতারা অবশ্যই তাদের এই আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না। আর, তারা অবশ্যই মিজ আব্রাহামকে ১৭,৯৪০ ডলার প্রদান করবে তার হারানো উপার্জন হিসেবে।

ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অর্গানাইজার এরিন ক্রেসহল বলেন, এটি একটি পথ-প্রদর্শনকারী রায়।

“তাই, তাদের ভিসা স্ট্যাটাসের কারণে বহু কর্মী তাদের নিয়োগকর্তাদের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হয়। সে-সব লোকের জন্য কোনো ন্যায় বিচার পাওয়া এবং সত্যিকারের পরিবর্তন আনা আসলেই কঠিন।”

“আমরা সত্যিই আশা করি এটি মানুষকে সঙ্কেত দিবে যে, তারা সাহায্য চাইতে পারে এবং তারা তাদের অধিকার আদায় করার জন্য চেষ্টা করতে পারে এবং তাদের জন্য সহায়তা লাভের সুযোগও রয়েছে।”
  

মিজ আব্রাহাম বলেন, তিনি স্বস্তি বোধ করছেন যে, এই অগ্নিপরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে এবং তার মামলাটি সফল হয়েছে।

“আমি আমার জীবনের সেই দিনগুলোর কথা আর মনে করতে চাই না। সেগুলো অনেক কঠিন ছিল,” বলেন তিনি।

“(তবে) আমি এখন অনেক খুশি। আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।”

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 18 June 2020 6:24pm
By Tom Stayner
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends