ভারতে ১৫২ বছর পর স্থগিত রাষ্ট্রদ্রোহ আইন

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন, এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ১৬২ বছর পর ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া এই আইন প্রথমবার স্থগিত রাখা হল।

A woman holds a placard protesting against the sedition case filed by police against a school after a play performed by students denouncing a new citizenship law, in Bangalore, India, Tuesday, Feb. 4, 2020.

Indias Supreme Court on May11, 2022, put the countrys colonial-era sedition law on hold. Source: AAP Image/AP Photo/Aijaz Rahi

ভারতের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনা করবে। কেন্দ্র যতদিন না ব্রিটিশ আমলে তৈরি আইনের পুনর্বিবেচনা করছে, ততদিন পর্যন্ত এই আইন প্রয়োগ স্থগিত থাকবে। আপাতত রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে কোনও এফআইআর দায়ের করা যাবে না। এই আইনে আর কোনও গ্রেফতার হবে না। ইতোমধ্যেই এই আইন প্রয়োগ করে যে সমস্ত মামলা চলছে, তা স্থগিত হয়ে যাবে। এই আইনের বলে বন্দিরা জামিনের আবেদন করতে পারবেন। যদি রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা রুজু করা হয়, তাহলে অভিযুক্তরা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যেতে পারে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, পুনর্বিবেচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কি স্থগিত রাখা হবে এই আইন। এরপরেই কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায় যে, তারা রাজ্যগুলোকে বলতে পারে, পুলিশ সুপার বা তার উঁচু পদমর্যাদার আধিকারিকরাই যেন শুধুমাত্র রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, যতদিন না রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা শেষ করছে কেন্দ্র, ততদিন স্থগিত থাকবে এই আইনের প্রয়োগ।

এদিকে, আদালত এবং তার স্বাধীনতাকে সম্মান করার একটি লক্ষ্মণ রেখা রয়েছে, যা অতিক্রম করা যায় না, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বুধবারই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্র পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন। এরপরেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এবং তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আদালতকে জানিয়েছেন। সমস্ত অঙ্গকে অবশ্যই একে অপরকে সম্মান করতে হবে। যা বলা বা করা হয়, তাতে ভারতের সংবিধান ও সমস্ত আইনকে সম্মান করতে হবে।

আদালতের রায় নিয়ে স্পষ্টতই ধাক্কা খেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি মনে করেন এই রায় ভুল? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে চান নি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের স্থগিতাদেশ নিয়ে টুইট করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। তিনি লিখেছেন, সত্যি কথা বলা দেশভক্তি, দেশদ্রোহিতা নয়। সত্য কথা শোনাটাই রাজধর্ম। সত্যি কথাকে আটকে রাখা হল ঔদ্ধত্য। ভয় পেও না।

এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, বুধবার সত্যিই একটা ঐতিহাসিক দিন। ওই আইন ব্রিটিশরা ভারতীয়দের দমন করার জন্য করেছিল। এটা কোন সরকারের ভারতীয়দের ওপর চাবুক চালানোর জন্য হয় নি।

আরেক তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, এত বছর পর ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ঐতিহাসিক। এই আইনটা পুরো বাতিল করে দিলে ভালো হত। তবে কেন্দ্রকে পুনর্বিবেচনার জন্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

প্রসঙ্গত, এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা বলেন, চিন্তা যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ইতিমধ্যে রয়েছে তাদের নিয়ে। যতদিন না আইনটি নতুন করে পুনর্বিবেচনা হচ্ছে ততদিন এই অভিযুক্তদের কী হবে? এই মামলাগুলো নিয়ে কী ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার? তার কথায়, যারা ইতোমধ্যে আটক হয়েছেন বা যাদের বিরুদ্ধে এই মামলা রয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কী? এই আইন কি আপাতত স্থগিত রাখা হবে?

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বলেই স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মহাত্মা গান্ধীর মতো নেতাদের গ্রেপ্তার করা হত। এখনও এই ধরনের আইন বলবৎ করা উচিত কিনা, তা নিয়ে আগেও কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করেছে সর্বোচ্চ আদালত। এমনকি এই আইনের দ্বারা সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে, এই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি। তবে এই আইন পুরোপুরিভাবে ছেঁটে ফেলা হোক, এমনটা চায় না সুপ্রিম কোর্ট।

এই প্রসঙ্গে অন্যতম মামলাকারী তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, দীর্ঘদিনের লড়াই স্বীকৃতি পেয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে এই রায় প্রদানের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। আশা করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার যথোপযুক্ত পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এই আইনের বিলোপ ঘটাবে।

Follow SBS Bangla on .

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Published 12 May 2022 12:37pm
By Partha Mukhopadhyay

Share this with family and friends