ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সোলার সেল থেকে সিলিকন পুনর্ব্যবহার করার মূল সমাধান খুঁজে পেয়েছেন

ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন টন সোলার প্যানেল বর্জ্য ল্যান্ডফিল বা আবর্জনা ফেলার জায়গাগুলোতে পতিত হবে। এই সোলার প্যানেলগুলোতে অল্প পরিমানে হলেও সেমিকন্ডাক্টর হিসেবে ব্যবহৃত হয় মূল্যবান রাসায়নিক পদার্থ সিলিকন। ডেকিন ইউনিভার্সিটির বাংলাভাষী গবেষক এবং মেটেরিয়াল সায়েন্টিস্ট ডঃ মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান এবং প্রফেসর ইং (আয়ান) চেন এই ফেলে দেওয়া সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া সিলিকন ব্যাটারিতে ব্যবহার করার একটি উপায় নিয়ে গবেষণা করে সাফল্য পেয়েছেন।

Bangladeshi Community Dr Mokhlesur Rahman Silicon

পদার্থ বিজ্ঞানী ডঃ মোঃ মোখলেসুর রহমান এবং অধ্যাপক ইং (আয়ান) চেন Source: Supplied

ডেকিনের ইনস্টিটিউট ফর ফ্রন্টিয়ার মেটেরিয়ালসের দুজন গবেষক ফেলে দেওয়া সোলার প্যানেল থেকে সিলিকন বের করার এবং এটি ব্যাটারির জন্য ন্যানো-সিলিকনে পুনর্ব্যবহার করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন।

পদার্থ বিজ্ঞানী ডঃ মোঃ মোখলেসুর রহমান এবং অধ্যাপক ইং (আয়ান) চেন বর্জ্য সৌর প্যানেল থেকে সিলিকন পূনরায় আহরণ করতে গবেষণা করছিলেন ।এটি উচ্চ-মূল্যের সিলিকন ল্যান্ডফিলে যাওয়ার পরিবর্তে অর্থসাশ্রয় করবে।

এ প্রসংগে ডঃ রহমান বলেন, "যদিও সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর সোলারসেল গুলির তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র অংশ, তবে এসব সামগ্রীর মূল্য অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে ব্যবহৃত সিলিকন পূনরায় ব্যবহারের উপায় খুঁজছিলেন এবং এখানেই হয়তো আসল ব্যাপারটা লুকানো ছিল।"

গবেষকদের মতে, কোন সৌর প্যানেলের গড় জীবন ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হয়। এ সংক্রান্ত মডেলিং থেকে দেখা যায় যে, যদি সিলিকন রিসাইকেল না করা হয় তবে ২০৫০ সালের মধ্যে ল্যান্ডফিলগুলোতে ১.৫ মিলিয়ন টন সোলার প্যানেল বর্জ্য থাকবে - যা প্রায় একশত হাজার ছোট গাড়ির সমতুল্য।

একটি সৌর প্যানেলের বেশিরভাগ অংশ গ্লাস, ধাতু এবং প্লাস্টিকের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়, যদিও এর গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ক্ষুদ্র অংশ সিলিকন থেকে তৈরি করা হয়।

প্রফেসর চেন বলেন, "সিলিকন সেলগুলি একটি সৌর প্যানেলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা সূর্যের শক্তিটিকে ইলেক্ট্রনে স্থানান্তর করে। সিলিকন সেল বেশ মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান এবং ব্যবহৃত সোলার প্যানেলের সাথে সাথে এগুলো বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া অপচয়। আর এই গবেষণার ফলাফলের তাৎপর্য্য এখানেই।"

পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সিলিকনগুলি উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন অ্যানোড তৈরি করতে পারে যা ব্যাটারিতে কাজে লাগে। গাড়ি এবং ব্যাটারী প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো এজন্য ভবিষ্যতের প্রয়োজনে এসব ম্যাটেরিয়াল তাদের স্টকে রাখে কারণ উন্নত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চাহিদা বিশ্বে অনেক বেশি।

ডঃ রহমান বলেন, "আশ্চর্যের বিষয়, উদ্ধার হওয়া সিলিকন বাণিজ্যিক সিলিকনের মতোই কাজ করে বলে মনে করা হচ্ছে। এটা বিকল্প উৎস হিসেবে বেশ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।"

"আমাদের আবিষ্কারটি ভবিষ্যতে ব্যাটারি এবং এনার্জি সেক্টরের উপর নির্ভরশীল শিল্পগুলির বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জের সমাধান করবে।"

"প্রথমত, এ জাতীয় মূল্যবান ব্যতিক্রমী উচ্চমানের পদার্থ নষ্ট হোক এটা আমরা চাই না; ব্যাটারি গ্রেড ন্যানো-সিলিকন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রতি কেজির দাম ৪৪,০০০ ডলারেরও বেশি।"

"দ্বিতীয়ত, অটোমোটিভ শিল্প ভবিষ্যতে ব্যাটারি চালিত হওয়ার সাথে সাথে, ব্যাটারি সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় সন্ধান করা হচ্ছে। সিলিকন পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে ব্যাটারি গ্রেড সিলিকনকে ন্যানো-আকার দেওয়া, যা একই জায়গায় প্রায় দশগুণ বেশি শক্তি জমা রাখতে পারে।"

"এটিই পুনর্ব্যবহার চিন্তার মূল বিষয়-পণ্যটি যেখানে অন্যথায় নষ্ট হয়ে যেতো, সেখানে এটিকে পুনর্ব্যবহার করা হোক এবং আরও মূল্যবান করে তোলা হোক।"

ডেকিন রিসার্চ ইনোভেশনসের সিনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার অ্যান্ড্রু রাউ এবং ইন্ডাস্ট্রি পার্টনার ডেলামিনিটিং রিসোর্সস মেলবোর্নের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট ফর ফ্রন্টিয়ার মেটেরিয়াল সার্কুলার ইকোনমি স্ট্র্যাটেজি লিড, ক্যাথরিন ম্যাকমাহন প্রকল্পটিতে সরাসরি সহায়তা করেছে।

Share
Published 12 November 2019 4:49pm
Updated 12 November 2019 5:04pm
By Shahan Alam
Source: Deakin University

Share this with family and friends